
বগুড়া এমন একটি জেলা যা উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখানে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা হলে আগুনে পোড়া রোগীদের বিনা চিকিৎসায় পরপারে যেতে হয়।
২০১৮ সালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের দোতলায় নির্মিত ৮ শয্যা বিশিষ্ট বার্ন ইউনিটের কাজ শুরু হয়। ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বার্ন ইউনিটের কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ। বার্ন ইউনিটটি ২০২০ সালে হস্তান্তর হলে প্রয়োজনীয় লোকবল, যন্ত্রপাতি বরাদ্দ না থাকায় গত ৬ বছরের এর কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন সেখানকার দামী বেডগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে। এই বার্ন ইউনিট চালুর জন্য চিঠি চালাচালিই হয়েছে কিন্তু কোনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বার্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন না হওয়ায় এটি এখন হাসপাতালে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বার্ন ইউনিটের কাজ শেষ হওয়ার পর করোনা দেখা দিলে আইসিইউ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
বার্ন ইউনিটের সকল অবকাঠামো সম্পন্ন করে বগুড়া গণপূর্ত বিভাগ মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তৎকালীন তত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. এ টি এম নুরুজ্জামানের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। বার্ন ইউনিট চালুর জন্য লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রেরণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি চালাচালি শুরু করেন তিনি। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া না গেলে অলস ভাবে পড়ে থাকে বার্ন ইউনিট।
এখানে সেন্ট্রাল মেডিকেলের ষ্টোর থেকে অত্যাধুনিক বেড স্থাপন করা হয়। এই বার্ন ইউনিটটিতে সেন্ট্রাল এসি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও করা হয়।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ডা. নুরুজ্জামান মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এক চিঠিতে লেখেন- বার্ন ইউনিটের কাজ শেষ হয়েছে এবং হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই বার্ন ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও লোকবল নিয়োগের অনুরোধ রইলো।
এটি চালুর জন্য সিনিয়র কনসালটেন্ট একজন বার্ন/সার্জারী, জুনিয়র কনসালটেন্ট দু’জন বার্ন/ সার্জারী, সহকারী রেজিষ্টার বার্ন/সার্জারী দু’জন, সহকারী রেজিষ্ট্রার বার্ন / সার্জারী দু’জন, আইএমও বার্ন/সার্জারী ৪ জন, এমও বার্ন/সার্জারী ৪ জন, এ্যানেসথেসিওলজিষ্ট দু’জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৬ জন, অফিস সহায়ক ১৬ জন, ওয়ার্ড বয় ১২ জন, পরিচ্ছন্ন কর্মী ৮ জনের জন্য চাহিদা পত্র দেয়া হয়। ৮ বেডের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র চাওয়া হয়। কিন্তু সাড়া মেলেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
এখন এই ইউনিট কখনো করোনার আইসিইউ, কখনো ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের দাপ্তরিক কাজেও ব্যবহৃত হয়।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের বর্তমান তত্বাবধায়ক ডা. মজিদুল ইসলাম জানান, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বার্ন ইউনিট হওয়ার সম্ভাবনা কম। যেহেতু প্রতিটি মেডিকেলে কলেজে বৃহৎ আকারে বার্ন / সার্জারী ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন এই ইউনিটকে কোভিডের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বেডগুলোকে গুছিয়ে রাখা হয়েছে।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপতালের উপ-পরিচালক ডা. ওয়াদুদ জানান, মেডিকেল কলেজে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিটের কোনো নির্দেশনা আসেনি। আগুনের পোড়া রোগীদের একটি ছেলেদের ও একটি মেয়েদের দুটি কক্ষে রাখা হয়েছে। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের স্থাপিত বার্ন ইউনিট এখন পর্যন্ত বার্ন ইউনিট ধরা হয়। লোকবলের সংকটের জন্য সেখানে বার্ন ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না।