
হামিদুল হাসান। পরিবারের বড় সন্তান। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরি নেয়ার। কিন্তু নিয়তির পরিকল্পনাটা হয়তো ভিন্ন ছিল। একদিন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা দেলোয়ার শিকদার। এরপর থেকেই শুরু হয় হামিদের জীবনযুদ্ধ।
অসুস্থ বাবা, মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে পরিবারের হাল টেনে ধরতে হামিদ নেমে পড়েন চাকরির খোঁজে। একটি চীনা মোবাইল প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন তিনি। কয়েকবছর সবকিছু ঠিকই চলছিল। তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো করোনা মহামারী! কোভিডের ধাক্কায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে তার পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার।
বেকারত্বের বোঝা আর পরিবারের হাল ধরার দুশ্চিন্তা যখন হামিদকে ঘিরে ধরেছিল, তখন বাবার ছোট্ট মসলার দোকানে নিয়মিত বসতে শুরু করেন। এই দোকানে বসেই জীবনের বাক বদলাতে শুরু করেন অদম্য এই মেধাবী। কোভিডের শেষের দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ই-কমার্স পেজ চালু করেন। এর নাম দেন ‘গ্রিন অর্গানিক ফুড’।
যাত্রার শুরুটা ছিল কাঠপোড়া কঠিন। তবু হাল ছাড়েননি হামিদুল। ধৈর্য আর বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে বড় করেছেন ব্যবসার আকার। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচজনের। নিয়মিত তাদের পারিশ্রমিকও দিচ্ছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তা হামিদুল হাসান বলেন, আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম, সেখানে কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়েছিলাম। একটা সময় ব্র্যান্ড শপের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। আয় যা ছিল, পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে পারতাম। তবে করোনাকালীন সময়ে চাকরি হারিয়ে অন্ধকার দেখছিলাম। কয়েকমাস বেকারও থেকেছি। শেষ পর্যন্ত বাবার ছোট্ট দোকানে বসে অনলাইনে ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা করি।
‘বাবার দোকানে মসলাজাতীয় পণ্য পাওয়া যেত। আমি সেখানে নিয়মিত বসতে শুরু করি। তখন চিন্তা আসে, এগুলো কীভাবে অনলাইনে সেল করতে পারি। সেখান থেকেই মূলত শুরু।’-যোগ করেন হামিদুল।
তিনি জানালেন, সচারাচর একই ধরনের মসলা সবাই বেচাকেনা করেন। এজন্য আমি ভিন্ন কিছু ভাবতে শুরু করি; যেহেতু ব্যবসাটা ঢাকা কেন্দ্রিক করছিলাম। এরপর জেলা ধরে ধরে ঐতিহ্যবাহী মসলার খোঁজ করতে শুরু করি। এক পর্যায়ে চুইঝালের বিষয়টা মাথায় আসে, এরপর কুমড়োবড়ি নিয়ে কাজ শুরু করি। এই দুই পণ্যে ব্যাপক সাড়া পাই। ধীরে ধীরে চিয়া সিড, মখু, ঘানিতে ভাঙা খাটি সরিষার তেল ইত্যাদি পণ্য অনলাইনে ব্র্যান্ডিং করতে শুরু করলাম। এটা আমার জন্য সহজ হয়েছিল, কেননা আমি মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করেছি।
তরুণ এই উদ্যোক্তা বললেন, শুধু ফেসবুকে পণ্য বিক্রি করে মাসে লাখ টাকার আয় হচ্ছে। বর্তমানে আমিসহ পাঁচজন এই প্রতিষ্ঠানে সময় দিচ্ছি। বাকিরা বেতনভুক্ত। মাস শেষে তাদের পারিশ্রমিক দিতে পারছি, এটা অনেক ভালো লাগে। আমি চাই ই-বিজনেসে গোটা দেশে নেতৃত্ব দিতে। সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছি।
হামিদুলের মতে, যেসব শিক্ষিত তরুণরা চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন সুযোগ আসছে না। সময় নষ্ট করছেন, তাদের জন্য আমার একটাই পরামর্শ থাকবে, ঘরে বসে না থেকে নিজেই উদ্যোক্তা হোন, সঙ্গে আরো দশজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করুন।
এনটি/এমআইএ