
আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের অভাব নেই। লিওনেল মেসি আর দিয়েগো ম্যারাডোনা তো সর্বকালের সেরাদের কাতারে। ম্যারাডোনা পৃথিবীর মায়া ছেড়েছেন বছর কয়েক আগে। মেসিও ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায়। এমন সময় আসছে নতুন একজন ফুটবলার। যাকে মনে করা হচ্ছে মেসির যোগ্য উত্তরসূরী। তার নাম, ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়ানো।
অবাক হলেও সত্যি, মাস্তান্তুয়ানোর পরিবারের ইচ্ছে ছিল তিনি টেনিস খেলোয়াড় হবেন। অথচ এখন অন্য পথের পথিক তিনি। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বিশ্ব ফুটবলে আলোচনার টেবিলে উঠে এসেছেন মাস্তান্তুয়ানো। কে এই ফুটবলার? তার খেলার ধরনই বা কেমন?
২০০৭ সালের ১৪ আগস্ট আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের আজুল শহরে জন্মগ্রহণ করেন ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়ানো। শৈশব থেকেই তিনি টেনিসের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তার আদর্শ ছিল নোভাক জোকোভিচ। মাত্র ১০ বছর বয়সে স্থানীয় টেনিস টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন। তবে একপর্যায়ে ফুটবলের প্রতি টান অনুভব করতে থাকেন ফ্রাঙ্কো। পরিবারও ফুটবলের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা লক্ষ করে তাকে রিভার প্লেট একাডেমিতে ভর্তি করায়। সেখান থেকেই তার পেশাদার ফুটবল যাত্রার সূচনা।
অবশ্য রিভার প্লেটে শুরুতেই আসেননি মাস্তান্তুয়ানো। ১০ বছর বয়সে ট্রায়াল দেওয়ার পর ক্লাবটি তাকে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হতে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু তখনও তিনি টেনিসে ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন। পরের বছর সেমেন্টো নামের একটি ক্লাবে যোগ দেন। তবে সব ছেড়ে ১২ বছর বয়সে রিভার প্লেটে যোগ দিতে চান তিনি। ক্লাবও না করেনি। সেখান থেকেই শুরু হয় মাস্তান্তুয়ানোর নতুন পথচলা।
যুব দলে সুযোগ পেয়েই নিজেকে প্রমাণ করেন মাস্তান্তুয়ানো। করোনাভাইরাসের সময়টায় তার ক্যারিয়ারের অগ্রযাত্রা কিছুটা থমকে থাকলেও ভেতরে ভেতরে নিজেকে ঠিকই প্রস্তুত করতে থাকেন তিনি। যার ফল হিসেবে ২০২৩ সালের আগস্টে ক্লাবের সঙ্গে প্রথম পেশাদার চুক্তি স্বাক্ষর করেন এ ফুটবলার। রিলিজ ক্লজ ধরা হয় ৩০ মিলিয়ন ইউরো।
২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি মাত্র ১৬ বছর বয়সে রিভার প্লেটের সিনিয়র হয়ে অভিষিক্ত হন মাস্তান্তুয়ানো। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির ইতিহাসে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে নামেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে কোপা আর্জেন্টিনায় গোল করার মাধ্যমে ক্লাবের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এ ফুটবলার। পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে চলার।
মাস্তান্তুয়ানোর প্লেয়ার প্রোফাইল
মাস্তান্তুয়ানো মূলত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলে থাকেন। তবে প্রয়োজনে উইং এবং সেন্টার মিডফিল্ডেও খেলতে পারেন। তার বড় শক্তি দুই পায়েই ড্রিবল করতে পারা। তবে বাম পায়ে বেশি খেলে থাকেন। দূর থেকে গোল করার পাশাপাশি ফ্রি-কিকেও দারুণ দক্ষ এই ফুটবলার। এমনকি অল্প বয়সেই মাঠে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণেই তাকে মেসির সঙ্গে তুলনা করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। মাস্তান্তুয়ানো নিজেকে লিওনেল মেসি, ফিল ফোডেন এবং নেইমারের আদর্শে অনুপ্রাণিত বলে জানিয়েছেন।
জাতীয় দলের পথে কতদূর?
মাস্তান্তুয়ানো মূলত আর্জেন্টিনার নাগরিক। তবে দাদা-দাদি ইতালিয়ান হওয়ায় তার ইতালির পাসপোর্টও রয়েছে। এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা অ-১৭ এবং অ-২০ জাতীয় দলে খেলা এ ফুটবলারকে জাতীয় দলে পেতে আগ্রহী ইতালিও। দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় যেকোনো এক দেশ বেছে নিতে পারবেন তিনি। তবে আর্জেন্টিনার হয়েই তার খেলার সম্ভাবনা বেশি।
ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর আগ্রহ
মাস্তান্তুয়ানোর প্রতিভা এরই মধ্যে ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর নজর কেড়েছে। বার্সেলোনার স্কাউটরা বেশ কয়েকবার সরাসরি তার খেলা দেখেছেন। তবে রিয়াল মাদ্রিদসহ প্রিমিয়ার লিগের বেশ কিছু ক্লাব এই মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী। গুঞ্জন আছে শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদেই যোগ দিতে পারেন এই ফুটবলার। যদিও ইউরোপিয়ান ফুটবলে ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে আগেভাগে কিছু বলে দেওয়া অসম্ভব।
ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়ানো এরই মধ্যে রিভার প্লেটের হয়ে সুপারকোপা আর্জেন্টিনা জিতেছেন। অল্প বয়সেই ক্লাবের ইতিহাসে একাধিক রেকর্ড গড়েছেন তিনি। বয়স ১৮ পেরোনোর আগেই আর্জেন্টিনার ফুটবলের ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন এ মিডফিল্ডার। মাস্তান্তুয়ানো শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে খেলবেন নাকি ইতালির- সেটি ভবিষ্যতের বিষয়। তবে একটা কথা নিশ্চিত, গোটা ফুটবল দুনিয়াই তাকে দেখছে। নতুন মেসি কোনদিকে যান, সেটাই এখন দেখার।
লেখা: আসাদুজ্জামান লিটন, ক্রীড়া সাংবাদিক