
২০৩০ সালে শতবর্ষ পূরণ করবে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশেষ এ মাইলফলককে রাঙাতে অংশগ্রহণকারী দল সংখ্যা আরো বাড়ানোর চিন্তা করছে ফিফা। ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ নেবে ৪৮ দল। পরবর্তী আসরে সেই সংখ্যা ৬৪ করতে চাইছে ফিফা।
তবে আসলেই কি ৬৪ দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব? এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অগ্রগতি কতখানি?
চলতি বছরের ৬ মার্চ ফিফার এক অনলাইন সভায় ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব দেন উরুগুয়ের প্রতিনিধি ইগ্নাসিও আলোনসো। সভায় থাকা অন্য প্রতিনিধিদের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া খুব একটা আশাব্যঞ্জক ছিল না। যেখানে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেন উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্ডার সেফরিন।
এরপর এপ্রিলে ফিফার সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৪ দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব দেয় লাতিন আমেরিকার ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। এখন পর্যন্ত অন্য সদস্য দেশগুলো খুব বেশি আগ্রহ না দেখালেও প্রস্তাবটি নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তিনি বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা ও গবেষণা করতে কাউন্সিল মেম্বারদের আহ্বান জানিয়েছেন।
অবশ্য প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়েছে মানেই যে পাশ হবে, এমন নয়। এর আগে ফিফা বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনার চেষ্টা হিসেবে চারের জায়গায় প্রতি দুই বছর অন্তর টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চেয়েছিল। তবে নানারকম আলোচনা-সমালোচনা শেষে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কেন ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনে আগ্রহী ফিফা?
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা ফিফা বিশ্বকাপ। যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ উপভোগ করে থাকেন। ফিফার আয়েরও অন্যতম বড় উৎস এই প্রতিযোগিতা। আর্থিকভাবে আরও বেশি লাভবান হতে এবং খেলাটিকে বিশ্বময় আরও ছড়িয়ে দিতে ও উন্নতি করতে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো শুরু থেকেই বৈশ্বিক আসরে দল বাড়ানোর পক্ষে কাজ করেছেন।
মূলত বর্তমান ফিফা সভাপতির প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপের দল সংখ্যা ৩২ থেকে ৪৮-এ উন্নীত হয়েছে। দল যত বাড়বে, ফিফার লাভের অঙ্কও তত বেশি হবে। এ কারণেই মূলত দল বাড়াতে চাচ্ছে ফিফা। এছাড়া বেশি দল অংশ নেওয়ার অর্থ একাধিক দেশ স্বাগতিক হওয়ার সম্ভাবনা। এমনিতেই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্যও বিভিন্ন দেশের মাঝে একরকম প্রতিযোগিতা চলে। এর আগে আয়োজক বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতির খবরও এসেছিল প্রকাশ্যে। তাই এসব দিক স্বাভাবিক করতেও বেশি দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োহজনে আগ্রহী ফিফা।
৬৪ দলের বিশ্বকাপে সম্ভাব্য যত বাধা
আসন্ন ২০২৬ বিশ্বকাপের রুপরেখা সবই চূড়ান্ত। এরপর ২০৩০ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে তিন মহাদেশে। যা ইতিহাসে প্রথম। ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার ৬ দেশে একযোগে টুর্নামেন্ট আয়োজনে এমনিতেই আয়োজকদের নানারকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এরপর ২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হবে। ফিফা চাচ্ছে ২০৩০ না হলেও ২০৩৪ আসর থেকে দল সংখ্যা ৬৪ করা হোক।
৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বাছাইপর্বের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়া। বর্তমানে বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। অনেক ক্ষেত্রেই কিছু কিছু দেশকে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করতে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজন করলে সেই আবেদন ও উত্তেজনা কমে যাবে অনেকটাই। আসন্ন ৪৮ দলের বিশ্বকাপে লাতিন আমেরিকা থেকে ১০ দলের মাঝে সাতটি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। দলের সংখ্যা আরো বেশি বাড়ালে সম্প্রচারকারীদের আগ্রহও কমে যাবে।
এখানেই শেষ নয়। দলের সংখ্যা যত বাড়বে, লজিস্টিক ইস্যুও তত বড় হয়ে দেখা দেবে। ৩২ দলের বিশ্বকাপ সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে প্রায় ১ মাস সময় প্রয়োজন হয়। ৪৮ দলের আসরে সময় নিশ্চিতভাবেই আরো বেশি প্রয়োজন হবে। আসন্ন ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে রেকর্ড ১০৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ২০২২ বিশ্বকাপে হয়েছিল ৬৪টি ম্যাচ।
সবকিছু মিলিয়ে ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রচুর বাধা-বিপত্তি দেখছেন সমালোচকরা। তবে সভাপতি ইনফান্তিনোর অধীনে বিশ্বকাপে দল সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সব বাধা-বিপত্তির কথা মাথায় রেখেই ধারাবাহিকভাবে বিকল্প পথ খুঁজে যাচ্ছে ফিফা। আর তাই ভবিষ্যতে ৬৪ দলের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন হলে সেখানে অবাক হবেন না কেউই।
লেখক- আসাদুজ্জামান লিটন, ক্রীড়া সাংবাদিক